পিরোজপুরের কাউখালীতে সন্ধ্যা নদীর ভাঙ্গনের কবল থেকে খাদ্য গুদাম রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডর ৪ কোটি ৫১ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজ আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের দীর্ঘ বছর অতিবাহিত হলেও কাজ শেষ না করায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গুদাম কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বার বার কাজ বাস্তবায়নের তাগিদ দিলেও বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবরই উদাসীন রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান।
সরেজমিনে আমরাজুরী ইউনিয়নের কুমিয়ানে অবস্থিত খাদ্য গুদাম এলাকার সাবেক মেম্বার ফিরোজ আলম জানান, বরিশাল বিভাগের দক্ষিণ অঞ্চলের পিরোজপুর জেলা সহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় খাদ্য গুদামজাত করার লক্ষে সন্ধ্যা নদীর তীরে কাউখালী লঞ্চঘাট সংলগ্ন কুমিয়ান এলাকায় ৫ টি খাদ্য গুদাম গড়ে ওঠে। ওইখান থেকেই সরকারি ভাবে খাদ্য চাল, গম সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। সরকারের গ্রামীন জনগোষ্ঠীর জন্য গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন রাস্তা ঘাট, ভেরিবাধ, খাল খনন, মাটিকাটা সহ বিভিন্ন কাজের শ্রমিকদের কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হত ওইসব কাজের জন্য বরাদ্ধ করা খাদ্য সামগ্রী ওই গুদামে সংরক্ষণ করে সরবরাহ করা হয়। সন্ধ্যা নদীর কড়াল গ্রাসে কাউখালীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়।
আমরাজুড়ি ফেরিঘাট থেকে কুমিয়ান এলাকায় অবস্থিত খাদ্য গুদাম পেরিয়ে লঞ্চঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ইতোমধ্যে গুদামের সামনের জেটি, সিড়ি ও সীমানা প্রাচির নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে সন্ধ্যা নদীর ভাঙন রোধে ব্লক ও জিও ব্যাগ তৈরি করে ডাম্পিংয়ের জন্য ৪ টি প্যাকেজ করে প্রকল্প গ্রহন করা হয়। ২০১৮ সালে টেন্ডার দেওয়া হয়। ৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা মূল্য মানের ওই কাজ পায় মেসার্স রাজেন ব্রাদার্স। এরপরই ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজও শুরু করেন। তারা কছু জিও ব্যাগ এনে বালু ভর্তি করে এবং কিছু ব্লক তৈরি করে কাজ ফেলে রাখেন।
২০২০ সালের দিকে যৎ সামান্য বালু ভর্তি জিও ব্যাগ(প্রায় ধংশ প্রাপ্ত) গুলো নদীতে ফেলে(ডাম্পিং করা হয়েছে) এবং ব্লকগুলোর কিয়দাংশ ডাম্পিং করা হয় কিছু নদীর তীরে স্তুপ করে রাখে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এর পর থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে প্রায় ৪ বছর।
ওই এলাকার মিল্টন হোসেন ও নারী নেত্রী সাহিদা হক জানান, সন্ধ্যার তীব্র ভাঙ্গন বর্তমান থাকায় যেকোন সময় বিলীন হতে পারে কাউখালীর ঐতিহ্যবাহী খাদ্য গুদামের ৫টি ভবন। কাউখালীর খাদ্য গুদাম এক সময়ে মুলত গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নের প্রধান সহায়ক ওই খাদ্য গুদাম। কিন্তু আজ শত কোটি টাকার খাদ্য গুদাম সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় নদী ভাঙেনর মুখে রয়েছে। যা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
যেকোন মুহুর্তে খাদ্য গুদামের ভবনগুলো নদী গর্ভে বিলনি হতে পারে বলে আশংকা করছেন এলাকাবাসী। বাউন্ডারী ওয়াল নেই যার কারনে কাউখালী খাদ্য গুদাম অরক্ষিত এলাকায় পরিনত হয়েছে। বখাটেদের আডাখানায় পরিনত হয়েছে। রাতের আধারে মাদক সেবি ও জুয়ারীদের আড্ডা বসে প্রায়ই। এলাকাবাসী বখাটেদের কিছু বলতে সাহস পায় না।
কাউখালী ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, খাদ্য গুদাম একটি সংরক্ষিত এলাকা। কিন্তু বাউন্ডারী ওয়াল নেই যার কারনে কাউখালী খাদ্য গুদাম অরক্ষিত এলাকায় পরিনত হয়েছে। গোডাউনগুলো সন্ধ্যা নদীর খুবই কাছে এসে গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ করা না হলে যে কোনো সময় নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে খাদ্য গুদামের ভবন।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগের জন্য চেষ্টা করা হলেও মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে পিরোজপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুসাইর হোসেন জানান, কাজ চলমান রয়েছে। মোট ৪ টি প্যাকেজে কাজ ৩ টি প্যাকেজের কাজ চলমান। কাজ সমাপ্তির জন্য সময় বর্ধিত করা হয়েছে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। বাকি একটি প্যাকেজের কাজ শুরু না করায় সেটির কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। চলমান কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পানি কমতে শুরু করেছে। আশা করি নভেম্বর মাসের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।
Posted ৭:১৫ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Sangbad Dinrat | Editor & Publisher