শীতের মৌসুমে উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীতে খালগুলো শুকিয়ে গেছে। অধিকাংশ খালে পানি নেই। কিছু কিছু খালে পানি থাকলেও শীতের সময় তা তলানিতে থাকে। এ উপজেলার ছোট-বড় ৪০ টি খালের মধ্যে শুকনো মৌসুমে ( অগ্রহায়ন মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত) ২৭ টি খাল শুকিয়ে যায়। এসব শুকনো খালের সাথে সম্পৃক্ত কৃষক ও জেলে পরিবারগুলো এ মৌসুমে দুর্ভোগে থাকে। এ উপজেলায় ছোট-বড় ২৭ টি খাল শুকিয়ে যাওয়ায় ৫০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে তথ্যানুসারে ও সরেজমিন দেখা গেছে, একটি পৌরসভাসহ ৭টি ইউনিয়ন ও দেড় লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ উপজেলায় ছোট-বড় ৪০টি খাল, ৭টি বিল, প¬াবনভূমি ১৪টি, ১১ হাজার ৬২৩টি পুকুর ও ১টি নদী রয়েছে। এ থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৩৩৭০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। জনপ্রতি দৈনিক মাছের চাহিদা ৬৫ গ্রাম। সে হিসেবে এ উপজেলায় মোট জনসংখ্যার বাৎসরিক মাছের চাহিদা ২৮০০ মেট্রিক টন। চাহিদা মিটিয়ে বছরে উদ্বৃত্ত থাকে ৫৭০ মেট্রিক টন।
উপজেলার ৪০টি খালের মধ্যে বিবিচিনি ইউনিয়নের কারিকরপাড়া খাল, গড়িয়াবুনিয়া খাল, নাপিতখালী খাল, নোমোর খাল, সিদ্ধান্তের খান, সদর ইউনিয়নের কবিরাজের খাল, বাসন্ডা খাল, বেড়েরধন খাল, ল²ীপুরা খাল, হোসনাবাদের উত্তর কাটাখালী, ধনমানিক চত্রা, জলিসা, তালবাড়ি খাল, মোকামিয়া খাল, কাজিরাবাদ খাল, ভোড়া কালিকা বাড়ি খাল উল্লেখযোগ্য।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেতাগী উপজেলার ৪০ টি খালের মধ্যে ২৭টি খাল শীতের মৌসুমে (অগ্রহায়ন থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত) পানিশূণ্য থাকে। এসব খালের সাথে সম্পৃক্ত এলাকার প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ দুর্ভোগে দিন কাটাতে হয়। বেশি দুর্ভোগে থাকে কৃষক ও জেলে পরিবারগুলো। স্থানীয় জেলে পরিবারগুলো জীবিকা নির্বাহে এসময় অন্য পেশায় কাজ করতে হচ্ছে।
বেতাগী সদর ইউনিয়নের ঝোপখালী গ্রামের বাসিন্দা জেলে মোশারেফ হোসেন বলেন, এবার আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। কোনো খাল-বিল, এমনকি বেড়েরধন নদীতে পর্যন্ত পানি নেই। এই বেড়েরধন নদীতে ১৫ বছর আগেও লঞ্চ চলাচল করতো কিন্তু পলি জমে ভরাট হওয়ায় এখন ভাটির সময় নৌকা চলাচল করতে পারে না। মাছ ধরতে পারছি না, বেকার দিন কাটাচ্ছি।’
একই এলাকার অন্য একজন জেলে লিটন হাওলাদার (৩৫) বলেন, খালে পানি নেই, এ অবস্থায় জেলে পরিবারের সদস্যদের দিন কাটছে অর্ধাহার-অনাহারে।
খাল-বিলে মাছ না পেয়ে শীতের মৌসুমে সবজি ও শিশুদের খেলনা ফেরি করে সংসার চালাচ্ছেন জেলে পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভব রঞ্জন ঢালী। তিনি বলেন, ছোট-খাটো খাল ও নদীতে পানি নেই, মাছও নেই। তাই এসময় শিশুদের খেলনা ফেরি করে কষ্ট করে সংসার চালাতে হচ্ছে।
এসব খালের ২৪টি ¯øুলিজ গেট দিয়ে পানি ওঠা-নামা করছে। ¯øুলিজ গেটে লোহার পে¬ট বসিয়ে পানি ওঠা-নামা করানো হচ্ছে। স্রোত না থাকায় ২৪টি খাল পলি পড়ে শুকিয়ে গেছে। শীতের মৌসুমে পৌষ মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত কোনো পানি থাকে না। বাকি ১৪টি খালে পানি তলানিতে থাকলেও তা কোনো কাজে আসছে না কৃষক ও জেলে পরিবারগুলোর। মোকামিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের করুণা গ্রামের বাসিন্দা সত্তোর্দ্ধ আলহাজ্ব রুস্তুম আলী সিকদার বলেন,’ করুনা গ্রামের তালবাড়ি খাল একসময় প্রচুর মাছ ধরতো জেলেরা, এখন পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। এছাড়া গ্রামের মানুষ পানির অভাবে শীতকালীন শাক-সবজি ভালোভাবে চাষ করতে পারছে না। ’ তিনি তালবাড়ি খাল প্রসংগে আরো বলেন, দু’যুগ আগের এ খালের বাস্তবতা বর্তমানে স্মৃতি আর গল্পে পরিনত হয়েছে।’
এ বিষয় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সমাপ্তি সাহা বলেন, মাছ ধরা নিষিদ্ধের সময় উপজেলার ৩ হাজার ৩ শ জনকে সহায়তার চাল দেওয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মসূচির আওতায় ইতোমধ্যে ১০ টি খালের খনন কাজ শুরু হয়েছে। বাকি খালগুলো তালিকা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পেলে পর্যায়ক্রমে খালগুলো খনন করা হবে। ‘
Posted ৪:২৬ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪
Sangbad Dinrat | Editor & Publisher