পল্লী বিদ্যুৎ এর অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা বা জরিমানা করা এবং মামলা করা সম্পূর্ণ আমাদের বিষয় সাংবাদিকদের জানার বিষয় না। আমি দপ্তরের প্রধান আমার চেয়ে বড় কেউ নেই। আমি কি করবো না করবো সেটা আমি ভালো বুঝি। আপনারা যা পারেন তাই লেখেন এসব কথা বলেছেন বগুড়া পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-২ সোনাতলা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার উত্তম কুমার সাহা।
বগুড়ার সোনাতলা পৌরসভা ৯নং ওয়ার্ড কানুপুর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসা চোরাই সংযোগ। গত ২নভেম্বর বৃহস্পতিবার আনুমানিক রাত ৯টায় খবর পেয়ে চোরাই সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করেন পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।
জানা যায়, ওই গ্রামের মৃত আঃ কাদের আকন্দের ছেলে আব্দুল হামিদ আকন্দ অনেক দিন আগে থেকেই চোরাই ভাবে মেইন লাইনে হুক লাগিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আসছে। ফলে চোরাই সংযোগ ব্যবহার করে তিনি নিয়মিত ইলেকট্রনিক মটর দিয়ে পানি উত্তোলন করে পুকুরসহ বিভিন্ন কাজে পানি ব্যবহার করে আসছেন। এছাড়াও তিনি ওই লাইন থেকে আরও কয়েকটি প্যারা লাইন করে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আসছে। এলাকাবাসী অনেকেই জানান, আঃ হামিদ আকন্দ প্রায় বছর দুয়েক আগেও মুরগি খামারে একই ধরনের অপরাধে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়েছেন বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে বগুড়া পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি -২ এর সোনাতলা জোনাল অফিসের এজিএম জোবায়ের ইসলাম বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে আমরা কানুপুর গ্ৰামের আঃ হামিদের নিজের ঘরে মেইন সুইচ বসিয়ে মেইন লাইনে হুক লাগিয়ে অবৈধ ভাবে সংযোগ নিয়ে ইলেকট্রনিক মটর দিয়ে পানি উত্তোলন করে আসছে। আমরা সে সময়ে অবৈধ সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেই।
চোরাই বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে আঃ হামিদ আকন্দ বলেন, আমার বিদ্যুৎ বকেয়া থাকার কারণে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। বিল পরিশোধের পর পুনরায় সংযোগ দিয়েছে।
অপরদিকে উপজেলার দিগদাইড় ইউনিয়নের কলসদহপাড়া গ্রামের পল্লীবিদ্যুৎ এর একজন গ্রাহক জামিরুল ইসলাম জাম্বু জানান, আমি নিয়মিত প্রতি মাসেই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে থাকি। একপর্যায়ে হঠাৎ একদিন সোনাতলা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন এসে আমার ব্যবহৃত মিটারের সংযোগ কেটে দেয়। ওই সময় আমি আমার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের কাগজ দেখাই তারপরও কোন কথা না শুনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
তিনি আরও জানান, শুধু তাই নয় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরও তারা তার ব্যবহৃত মিটারটি খুলে অফিসে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি সোনাতলা জোনাল অফিসের ডিজিএম এর নিকট গেলে তিনি তার সাথে দূর’ব্যবহার সহ বিভিন্ন তাল-বাহানা করে এবং দিনের পর দিন সংযোগ দেবে দিচ্ছি বলে ঘুরাতে থাকে। এভাবে প্রায় ১০ দিন অতিবাহিত করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সোনাতলা জোনাল অফিসের ডিজিএম তার কাছ থেকে জরিমানার নামে মোটা অংকের টাকা নেয়, যার কোন রশিদ বা ডকুমেন্ট দেয়া হয়নি। এছাড়াও বেকায়দায় ফেলে একটি স্ট্যাম্পে ইচ্ছেমতো লিখে স্বাক্ষর নেয় তার কাছ থেকে। অবশেষে মিটার লাগানোর জন্যও পুনরায় টাকা দিতে হয় তাকে।
এখানেই শেষ নয়, ঠিক একই ধরনের অভিযোগ তুলেছেন আরো একজন গ্রাহক। ওই গ্রাহকের নিকট থেকে নেয়া হয়েছে জরিমানার নামে মোটা অংকের টাকা, যার নেই কোন রশিদ নেই। সেই সাথে ওই গ্রাহকের কাছ থেকেও একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়া হয় । জরিমানার টাকা কোথায় যায় তা কাহারো জানা নাই।
উপজেলার পাকুল্লা গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন তিনি মিটার সংযোগ নেয়ার জন্য প্রায় ৫ মাস পূর্বে বিদ্যুৎ অফিসের লোকের কাছে দুই কিস্তিতে সারে পাঁচ হাজার টাকা দেয়। শর্ত অনুযায়ী আগে বাড়িতে সৌর বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে হবে। তিনি সেটাও নিয়েছে। এরপরেও বিদ্যুৎ অফিসের নিয়ম অনুযায়ী সকল চাহিদা পূরণ করেও সংযোগ নিতে আজও অবদি বিদ্যুৎ অফিসে জুতা খয় করতে হচ্ছে।
এদিকে ভূক্তভোগী গ্রাহকরা সাংবাদিকদের বলেন, পল্লীবিদ্যুৎ এর দূর্ণীতি আপনাদের চোখে পড়েনা। প্রতি মাসে বিল আসে ৫০০ টাকা এ মাসে আমার বিল আসছে ২৫০০ টাকা। আগের বিদ্যুৎ যা ব্যবহার করছি এ মাসেও প্রায় তাই ব্যবহার করছি ৫০ থেকে ১০০ টাকা কমবেশি হতে পারে ২৫০০ টাকা কিভাবে বিল আসে এটা মিটার রিডিং যারা করে তাদের দূর্ণীতি। অফিসে গিয়ে সমস্যার কথা বললে, তারা বলে এ মাসে যা আসছে তাই দেন পরের মাস থেকে এমন আর হবেনা।
আবার অনেক গ্রাহক বলেন, মিটার ঘুরলেও যেই বিল আবার মিটার না ঘুরলেও একই বিল। গরমের সময় বলতে গেলে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন বলে শীতের সময় ম্যাকাপ করে দেবো। তেমনি শীতের সময় বলতে গেলে জানায় গরমের সময় ম্যাকাপ করে দেবো। এভাবেই পল্লী বিদ্যুৎ সোনাতলা জোনাল অফিস গ্রাহকদের সাথে প্রতিনিয়তই প্রতারনা করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা যা দেখার কেউ নাই, বলার কেউ নাই।
Posted ২:৫৭ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৩
Sangbad Dinrat | Editor & Publisher