মঙ্গোলিয়া জনসংখ্যায় ছোট একটি দেশ (প্রায় ৩৩ লাখ)। অথচ দেশটির খনিজ সম্পদ, নির্মাণ ও পর্যটন খাত দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রবৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন খাতে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকট পূরণে বিদেশি শ্রমিকদের, বিশেষ করে বাংলাদেশি শ্রমিকদের, একটি নতুন সম্ভাবনাময় কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।
খাতভিত্তিক শ্রমিক সংকট ও বাংলাদেশি শ্রমিকদের সুযোগ—
১) খনিজ ও খনিশিল্প (Mining & Extraction) প্রায় ১,৫০,০০০+ নতুন খনি খোলা হচ্ছে; শ্রমঘন কাজ Helper, Loader, টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজের সুযোগ।
২) নির্মাণ ও অবকাঠামো (Construction) প্রায় ৭০,০০০+ শহর ও অবকাঠামো সম্প্রসারণে দ্রুত উন্নয়ন রাজমিস্ত্রি, হেলপার, ইলেকট্রিশিয়ান হিসাবে বাংলাদেশিরা সহজে মানিয়ে নিতে পারে।
৩) পর্যটন ও আতিথেয়তা (Tourism & Hospitality) প্রায় ২৫,০০০+ বিদেশি পর্যটক বাড়ছে; প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব কুক, হাউসকিপিং, হোটেল সহকারী পদে চাহিদা আছে।
৪) কৃষি (Agriculture) প্রায় ৫০,০০০+ খাদ্য চাহিদা বাড়ছে কিন্তু উৎপাদন কম, দক্ষ কৃষি শ্রমিকের অভাব শাকসবজি ও শস্য চাষে মৌসুমী শ্রমিক প্রয়োজন।
৫) পশুসম্পদ ও পশুপালন (Livestock & Animal Husbandry) প্রায় ২,০০,০০০+ গ্রামীণ এলাকায় খামার বাড়ছে, কিন্তু লোক কম খামার সহকারী ও পরিচর্যাকারী পদে সুযোগ আছে।
৬ ) স্বাস্থ্যসেবা (Healthcare) প্রায় ১৫,০০০+ ডাক্তার-নার্সের ঘাটতি, গ্রামে স্বাস্থ্যসেবা দুর্বল অভিজ্ঞ নার্স, মেডিকেল সহকারী, টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজের সম্ভাবনা আছে।
৭) শিক্ষা (Education) প্রায় ১০,০০০+ ইংরেজি ও প্রযুক্তি শিক্ষকের অভাব ইংরেজি, আইটি, কারিগরি বিষয়ে অভিজ্ঞদের জন্য ভিসা ও নিয়োগ সম্ভাব্যতা আছে।
৮) তথ্যপ্রযুক্তি (IT & Digital Services) প্রায় ৮,০০০+ ডিজিটালাইজেশন শুরু হলেও দক্ষ জনবল নেই ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক ডিজাইন, টেক সাপোর্টে ফ্রিল্যান্সিং ও চুক্তিভিত্তিক সুযোগ আছে।
৯ ) হস্তশিল্প ও কারুশিল্প (Handicrafts) প্রায় ১২,০০০+ পর্যটনপণ্য ও পশমজাত দ্রব্যের উৎপাদনে কর্মী কম হস্তশিল্পে অভিজ্ঞ নারী কর্মীদের সুযোগ আছে।
১০) পরিচ্ছন্নতা ও সাধারণ সেবা (Cleaning & General Services) ২,০০০+ হোটেল, হাসপাতাল, অফিসে ক্লিনার সংকট ক্লিনার, কেয়ারটেকার হিসেবে বাংলাদেশিরা উপযুক্ত।
১১) পরিবহন ও সরবরাহ (Transport & Logistics) ১,৫০০+ খনিশিল্প ও নির্মাণসামগ্রী পরিবহনে জনবল কাম ড্রাইভার, হেলপার পদে চাহিদা রয়েছে।
১২) সরকারি ও প্রশাসনিক খাত প্রায় ২০,০০০+ সরকারি ও প্রশাসনিক খাতে নানা রকম সম্ভাবনা রয়েছে দক্ষ ও শিক্ষিত কর্মীদের জন্য সুযোগ রয়েছে।
১৩) গার্মেন্টস সেক্টরে প্রায় ৪০০০০+ দক্ষ কর্মীদের জন্য সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য সুযোগের সারাংশ—
(ক) সর্বমোট বার্ষিক চাহিদা (বাংলাদেশি শ্রমিকদের উপযুক্ত খাতে): আনুমানিক ৩০,০০০–৩৫,০০০ জন প্রতিবছর।
(খ) বেশি সুযোগ যেসব খাতে: খনিশিল্প, নির্মাণ, পর্যটন, পশুপালন, গার্মেন্টস।
(গ) দক্ষতা সম্পন্নদের জন্য বিশেষ সুযোগ: স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, আইটি
চ্যালেঞ্জ ও ব্যাখ্যা—
১) কঠিন আবহাওয়া শীতকালে তাপমাত্রা কম থাকে বরফ পড়ে যে কারনে গরম কাপড়ের প্রয়োজন হয়।
২) ভাষা সমস্যা মঙ্গোলিয়ান ভাষা কঠিন; ইংরেজিরও সীমিত ব্যবহার হয় যে কারনে প্রতিটি দক্ষ দোভাষীর প্রয়োজন হয়।
৩) ওয়ার্ক পারমিটে বৈধভাবে যাওয়ার জন্য সরকারি প্রক্রিয়া অনুসরণ জরুরি। অন্যথায় বিড়ম্বনায় পড়তে হবে।
৪) সাংস্কৃতিক পার্থক্য যাযাবর সংস্কৃতি ও খাদ্যাভ্যাসে পার্থক্য রয়েছে যে কারনে নিজেদের মত করে রান্না খাওয়া ভালো।
মঙ্গোলিয়ায় শ্রমিক সংকট দিন দিন বাড়ছে, বিশেষ করে শ্রমঘন এবং প্রযুক্তি-ভিত্তিক খাতে। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি নতুন কর্মসংস্থান গন্তব্য হতে পারে। সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ, তথ্য সংগ্রহ এবং সঠিক রিক্রুটিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশি শ্রমিকরা মঙ্গোলিয়ার শ্রমবাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে সকল জনশক্তি রপ্তানিকারকদের অনুরোধ করবো সতর্কতার সহিত মঙ্গোলিয়ার শ্রমবাজারে কাজ করতে হবে যেন সেখানে বাংলাদেশের বদনাম না হয়।
শহিদুল ইসলাম সাগর
ওভারসীস ডিরেক্টর, ডায়নামিক স্টাফিং ওভারসীস সার্ভিসেস লিমিটেড
চেয়ারম্যান, বিটিইএ
Posted ৩:১১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫
Sangbad Dinrat | Editor & Publisher