‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ শুরু থেকেই সরব ভূমিকা পালন করেছেন প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। আন্দোলনকারী ছাড়াও এই দুই জনের রয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়। তবে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে সফল এই দু’জন। আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই আন্দোলনের মূল নেতা ছিলেন তারা। আন্দোলন সফলতার মুখ দেখার পর খুব কম সময়ের মধ্যে তারা দুই জন এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ট উপদেষ্টা হলেন তারা।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথও নিয়েছেন তারা।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে শুক্রবার (৯ আগস্ট) দুপুরে দপ্তর বণ্টন করা হয়েছে। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলামকে দেয়া হয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং আসিফ মাহমুদকে দেয়া হয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০০৭ সালে ওয়ান ইলিভেন সরকারের আমলে নাগরিক শক্তি নামে একটি দলের পরিকল্পনা করেছিলেন। সেটি ছিল বাংলাদেশের একটি প্রস্তাবিত রাজনৈতিক দল। তবে ৩ মে ইউনূস তৎকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকার প্রধান ফখরুদ্দীন আহমদের সাথে বৈঠকের পর তিনি তার রাজনৈতিক পরিকল্পনা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ঘোষণা করেন। নাহিদ হলেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব। আর আসিফ এই সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির আহ্বায়ক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। ২০১৪ সালে ঢাকার দক্ষিণ বনশ্রী মডেল হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এইচএসি পাস করে ২০১৬-১৭ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন নাহিদ ইসলাম। তিনি বর্তমানে মাস্টার্স প্রোগ্রাম (এমএসএস) অধ্যায়নরত আছেন একই বিভাগ থেকে। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন এই ছাত্র নেতা। সেখান থেকে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ছাত্র অধিকার পরিষদের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন। ২০২৩ সালের ৩ জুলাই গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে একযোগে পদত্যাগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সব সদস্য যার মধ্যে নাহিদও ছিলেন।
এরপর ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক আখতার হোসেনের নেতৃত্বে গঠন করা হয় গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি। নাহিদ বর্তমানে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সরব দেখা গেছে তাকে। বিভিন্ন সময় ফেসবুক লাইভে এসে আন্দোলনকারীদের নির্দেশনা দিয়েছেন আসিফ। পুরা নাম আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ১৪ জুলাই ১৯৯৮ সালে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নাখালপাড়া হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে ২০১৫ সালে এসএসসি পাস করেন। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। এখন তিনি স্নাতকোত্তরে পড়ছেন। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় থাকার পর ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে রাজনীতি শুরু তার। সর্বশেষ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর সংগঠনের গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে তার নেতৃত্বে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি পদত্যাগ করে। এরপর ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবরে গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি গঠনের পর তিনি সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
Posted ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১০ আগস্ট ২০২৪
Sangbad Dinrat | Editor & Publisher