শনিবার ১৬ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

‘৫ই আগস্ট স্ত্রীসহ বাথরুমে ৫ ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলাম’

স.দি ডেস্ক রিপোর্ট   সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
18 বার পঠিত
‘৫ই আগস্ট স্ত্রীসহ বাথরুমে ৫ ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলাম’

ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপরই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তারপরও একের পর এক নেতাকর্মী গ্রেফতার হতে থাকেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। এরমধ্যে অনেকে আবার বিভিন্ন কৌশলে বিদেশে পালিয়ে যান।

তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ৫ ঘণ্টা বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শেখ হাসিনার পতনের পর এই প্রথম কোনো গণমাধ্যমে কথা বললেন কাদের।

ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ওয়ালের এক্সিকিউটিভ এডিটর অমল সরকারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।

লুকিয়ে থাকার ঘটনা বর্ণনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন,‘এ বিষয়ে দেশে-বিদেশে এবং ভারতবর্ষে সবার কাছে পরিষ্কার। ৫ই আগস্ট সেদিন ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ যে ছাত্র উত্থান, সে সময় আমি খুবই ভাগ্যবান, সেদিন আমার বেঁচে থাকার কথা ছিল না। মৃত্যু থেকে অনেক কাছে ছিলাম। আমারই সংসদ এলাকার আমার নিজের বাসাকে এড়িয়ে পার্শ্ববর্তী আরেকটা বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। তখন চারদিক থেকে মিছিল আসছিল। এটা আসলে ছিল প্রধানমন্ত্রীর (সাবেক) গণভবন কেন্দ্রিক। আমরা অবাক হলাম যে, সংসদ এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে এবং একটা ‘লুটপাটের লুম্পেন স্টাইল’-এ কতগুলো ঘটনা ঘটে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের লোক আসে এবং এদের মধ্যে বেশিরভাগই মনে হয়েছে-এটা কোনো রাজনৈতিক অভ্যুত্থান। এটা ‘লুটপাটের অভ্যুত্থান’।’

তিনি বলেন, ‘আমি যে বাসাটায় ছিলাম, তারা সে বাসাতেও হামলা করে। তারা জানতো না, যে সেখানে আমি আছি। আমার বাসা তারা ‘লুটপাট’ করেছে, কিন্তু যে বাসায় আমি গিয়ে আশ্রয় নিলাম, সেখানে হামলা করবে আমি ভাবতে পারিনি। দেখলাম অনেক লোকজন ঢুকে পড়েছে। তারা ভাঙচুর ও ‘লুটপাট’ করতে থাকে। আমি আমার স্ত্রীসহ বাথরুমে লুকিয়ে ছিলাম। অনেকক্ষণ ছিলাম, প্রায় ৫ ঘণ্টা। তারপর একটা পর্যায়ে তারা বাথরুমে ভেতরেও কমোড-বেসিন এগুলো ‘লুটপাট’ করেছে। আমার ওয়াইফ বাথরুমের মুখে দাঁড়িয়ে, বারবার সে বলছিল আমি অসুস্থ, এ কথা বলে তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। একটা পর্যায়ে তারা বাথরুমে যেগুলো আছে, সেগুলো লুট করার জন্য জোরপূর্বক প্রবেশের হুমকি দেয়। সে সময় আমার ওয়াইফ জিজ্ঞাসা করল কী করব- বললাম, খুলে দাও। তারপর ৭-৮ জন ছেলে ঢুকলো। খুবই আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। হঠাৎ তারা আমার দিকে তাকিয়ে, নেত্রী চলে গেল আপনি যাননি কেন? আমি কিছু বলছিলাম। তাদের মধ্যে কী উদয় হলো-আমি জানি না। তারা আমাকে বলে, আপনার ছবি তুলবো। তারপর ছবি তুলতে শুরু করলো, সেলফি নিচ্ছিলো। এই ছাত্রদের অনেকে হয়তো আমাকে চিনতো। কী কারণে যে আক্রমণাত্মক মনোভাবটা ছিল, সেটা নিমিষেই শীতল হয়ে গেল! তখন ঠান্ডা মেজাজি কথা বলছিল। এদের মধ্যে এক পর্যায়ে একটা গ্রুপ চেয়েছিল আমাকে রাস্তায় সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতে। কেউ কেউ আবার এটাও চেয়েছিল যে, জনতার হাতে তুলে দিতে। এটা অবশ্যই তখন একটা মানসিকভাবে ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়েছিল। এরপর একটা শার্ট, এদের ব্যাচ, লাল পতাকাশোভিত ব্যাচ লাগিয়ে কালো একটা, একটা মাস্ক মুখে দিয়ে আমাকে হাঁটতে হাঁটতে সংসদ এলাকা থেকে বড় রাস্তা, গণভবন অভিমুখী রাস্তায় নিয়ে যায়। ওখানে নিয়ে হঠাৎ করে কোথা থেকে একটা ট্যাক্সি আসে, একটা ইজি বাইক। সেটা খালিই ছিল। ওখানে গাড়ি-ঘোড়া কিছুই ছিল না। হঠাৎ করে কেন যেন এসে পড়লো। হয়তো আমার ভাগ্য। এরা দুইজনে আমাকে ও আমার ওয়াইফকে নিয়ে অটোতে উঠলো। আর বলতে লাগলো। পথে তো অসংখ্য মানুষ। চেকআপ চেকআপ সবজায়গায়। বলতে লাগলো আমাদের চাচা-চাচি অসুস্থ হাসপাতালে নিচ্ছি। ডিস্টার্ব করবেন না। এই করে করে নিয়ে গেল। অনেক দূরে একটা জায়গায়। এটা ভাবতেও পারিনি যে, ওরা বাথরুমে ঢুকলো, সে বেঁচে থাকাটা সেদিন পরম সৌভাগ্যের বিষয়। আনস্পেকটেডলি বেঁচে গেছি। দিস ইজ দ্য ইম্পর্ট্যান্ট।’

কাদের বলেন, ‘ছেলেরা যেকোনোভাবে আমাদেরকে আর্মির হাতে তুলে দিতে পারতো। রাস্তায় অসংখ্য মানুষ। সেখানে অনেকেই তো আছে আমাদের অপজিশন। মেরে ফেলতে পারতো।’

এরপর কোথায় ছিলেন-এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি বাংলাদেশেই ছিলাম তিন মাসের মতো। আমার একটা উদ্দেশ্য ছিল-ওখান থেকে কিছু করা যায় কিনা। কিছু একটা করা যায় কিনা। সংগঠিত করা যায় কিনা। বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিক অসন্তোষ, কর্মচারীদের অসন্তোষ। প্রতিদিনই এগুলো লক্ষ করতাম। ক্ষোভগুলো তখন রাস্তায় নেমে আসছিল। বিশেষ করে গার্মেন্টস। সে সময় ভাবলাম-এদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিছু করা যায় কিনা। এই চিন্তাতেই তিন মাস পেরিয়ে গেল। এরপর একে একে সবাই অ্যারেস্ট হচ্ছি। আমি তো নেত্রীর পরের, তখনই দুইশো বারটা খুনের মামলায় আমি আসামি হয়ে গেছি। এই অবস্থায় অনেকে বলল, আবার এখান থেকেও অনেক অনুরোধ যাচ্ছিল আমি যেন সতর্কভাবে এদিকে চলে আসি। এভাবেই চিন্তা করলাম যে, আমার বাইপাস সার্জারি হয়েছিল। অনেকগুলো ওষুধ খেতে হয়। আমি ধরা পড়লে ওষুধ খাওয়াবে কে?। তারপর অনেককিছু ভাবনা-চিন্তা করে, পঁচাত্তরে এখানে এসেছিলাম বঙ্গবন্ধু হত্যার পর। ৩রা নভেম্বর জেলহত্যা হলো-কলকাতায় এসে নয় মাস ছিলাম। এখান থেকে ফিরে গিয়ে জগন্নাথ হলে একটা বৈঠক করছিলাম অনেক রাতে। ঢাকায় তখন কারফিউ। সেখান থেকে আমারেক অ্যারেস্ট করা হলো। এরপর ওয়ান ইলেভেনের পরে, তখনো জেল খেটেছি।’

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ৯ মাস কলকাতায় ছিলেন, তারপর কি আর আসেননি? জবাবে কাদের বলেন, ‘যখন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলাম তখন এসেছি। আর বিজয় দিবসে আমাকে প্রধান অতিথি করেছিল তখন এসেছি।’

আপনি (কাদের) যে রইলেন, তারপর কোনো সমস্যা হলো না? ছেলেগুলো আপনাকে কোথাও পৌঁছে দিল বা বিষয়টা তারা ফাঁস করেনি, ছেলেগুলো এমনটা করলো এর কারণ কি-এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমি রাতেই ওখান থেকে সরে গিয়েছি। আমিও বুঝিনি।’

ছেলেগুলো আওয়ামী লীগের ছিলো কিনা? জবাবে কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের হলে তো আমি চিনতাম।’

Facebook Comments Box

Posted ৬:৫৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

Sangbad Dinrat |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১  

উপদেষ্টা সম্পাদক
শহিদুল ইসলাম সাগর
চেয়ারম্যান, বিটিইএ

প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক
এম.টি.আই স্বপন মাহমুদ

বার্তা, ফিচার ও বিজ্ঞাপন:
+৮৮০ ১৯ ৭০ ৯১ ১৮ ৪৫
ইমেইল: sangbaddinrat@gmail.com

বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এসোসিয়েশন কর্তৃক নিবন্ধিত।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত।
error: Content is protected !!